নিশির ডাক পর্ব ৩ bangla choti nishi 3

আগের পর্ব 

বাড়ি পৌঁছে বেল বাজালো প্রীতম. কণিকাই দরজা খুললো আর সামনে ভেজা দুই যুবককে দেখে ফিক করে হেসে বললো : ভাবছিলাম তোদের এই অবস্থাই হবে. এ বাবা ভেজা কাক হি.. হি.

প্রীতম : মার খাবি কিন্তু… সর সামনে থেকে.

কণিকা সরে দাঁড়ালো আর ওরা ঢুকে পড়লো. কাকিমা দেখে বললো : এ বাবা দুজনেই তো ভিজে গেছো. যাও যাও কাপড় পাল্টে নাও নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে. এমন যখন তখন বৃষ্টি নামে না কি বলবো. ওরা ওপরে চলে এলো. প্রীতমের সর্দি তাড়াতাড়ি ধরে তাই ও আগে গেলো বাথরুমে. অনিমেষ ব্যাগ থেকে নতুন জামা আর প্যান্ট বার করে বন্ধুর বাইরে বেরোনোর অপেক্ষা করতে লাগলো. তখনি সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেলো ও. দরজার দিকে তাকালো ও আর তখনি প্রবেশ করলো সেই সুন্দরী. হাতে তোয়ালে নিয়ে এগিয়ে এলো দাদার বন্ধুর দিকে.

কণিকা : আপনি নিচের বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন. দাদার দেরি হবে. কারণ ও স্নান করবে. নইলে বৃষ্টির জল মাথায় বসে ওর জ্বর সর্দি ধরে নেবে. আপনি ততক্ষন অপেক্ষা করলে আপনার আবার শরীর খারাপ হয়ে যাবে. এই নিন…

এই বলে তোয়ালে টা এগিয়ে দিলো কণিকা.

অনিমেষ : না লাগবেনা… আমার নিজের তোয়ালে আছে.

কণিকা : সাবান আছে?

অনিমেষ : আজ্ঞে?

কণিকা : সাবান আছে? শ্যাম্পু আছে?

অনিমেষ : না… মানে ওগুলো আনতে……

কণিকা : ভুলে গেছেন তাইতো?

অনিমেষ মাথা চুলকিয়ে : হ্যা…. মানে ভুলেই গেছি. আসলে….

কণিকা : হুমম.. বুঝেছি… এই নাও… মানে নিন.

কণিকা একটা নতুন সাবান ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো. কণিকার হাত থেকে ওগুলো নিয়ে অনিমেষ হেসে উঠে দাঁড়ালো.

অনিমেষ : ধন্যবাদ… আর হ্যা….. তুমিও আমাকেও তুমি করে বলতে পারো…. আপনি বলার দরকার নেই.

কণিকা হেসে আচ্ছা বললো. অনিমেষ তাকিয়ে দেখলো কণিকার পেছনের দেয়ালেই ওর মায়ের কম বয়সের ছবিটা. সেই ছবির মুখেও হাসি. শুধু মুখের নয়… মা -মেয়ের হাসিতেও কি সুন্দর মিল. যেন দুটো একি মানুষ.

কণিকা : কি হলো? যাও… নইলে ঠান্ডা লাগবে তো?

অনিমেষ : হ্যা? ও হ্যা.. হ্যা…

অনিমেষ একটু লজ্জাই পেলো. বন্ধুর বোনের মুখের দিকে অমন হা করে কেউ তাকিয়ে থাকে? ইশ.. কি ভাবলো মেয়েটা? ওকে আবার বাজে ছেলে ভাবলো নাতো? এইসব ভাবতে ভাবতেই বাথরুমে ঢুকলো অনিমেষ.

সকালে উঠে খবরের কাগজ পড়াটা অনিমেষের অভ্যেস. কিন্তু আজ উঠে পড়ার সুযোগ হয়নি. ফিরে এসে পড়বে ভেবেছিলো কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যাবার জন্য সব দেরি হয়ে গেলো. ওদিকে কাকিমা দারুন রান্না করছে. তার গন্ধ দোতলার ঘর অব্দি আসছে. দুই বন্ধু দোতলায় বারান্দায় বসে আছে. প্রীতম আর অনিমেষ চা খাচ্ছে. হ্যা… চা টা কণিকাই করেছে. মায়ের রূপ নয়.. গুণও পেয়েছে মেয়েটা. প্রীতমের চা টা কেমন লাগছে অনিমেষ জানেনা কিন্তু ওর চা টা খেতে দারুন লাগছে. সেটা চায়ের গুন নাকি চা যে বানিয়েছে তার গুন সেটা জানেনা ও. প্রীতম বারান্দায় বসে কাগজের স্পোর্টস সেকশনটা পড়ছে আর অনিমেষ সব খবর পড়ছে. খেতে বেশ কিছুক্ষন দেরি আছে তাই ততক্ষন না হয় কাগজ পরেই সময় কাটানো যাক.

২০০৩ সাল তখন. তাই সেইভাবে মোবাইলের বদ অভ্যাস টা সকলের মধ্যে সেই ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি. কাগজ পড়তে পড়তে হঠাৎ একটা শিরোনামে চোখ আটকে গেলো অনিমেষের. হেসে উঠলো ও.

প্রীতম : কিরে? অমন হাসছিস কেন? কি লেখা দেখে হাসি পেলো?

অনিমেষ : আরে হাসবোনা… এই দেখ কি লিখেছে. বদলা নেবার জন্য পরিবারের ওপর করা হলো কালো জাদু. নিজের হাতে বাবা স্ত্রী সন্তানের খুন করে পুলিশের কাছে ধরা দিলো. লোকটা বলছে সে বুঝতেই পারছেনা কি থেকে কি হয়েছে গেলো. সে ভাবতেই পারছেনা সে নিজের হাতে কেন নিজের পরিবারের খুন করলো. তার মনে হচ্ছে তার ওপর কেউ কালা জাদু করেছে. উফফফফ… এটা কি ভাই? হাসবো নাতো কি?

প্রীতম : তুই বিশ্বাস করছিস না যে ব্যাপারটা অলোকিক?

অনিমেষ : মোটেও না. আরে ভাই এটা ব্যাটা ওই লোকটারই কারসাজি. নিশ্চই মাল খেয়ে বৌয়ের সাথে ঝগড়া করছিলো. রেগে মেগে মাথা ঠিক না রাখতে পেরে শেষে এই ভুল করে ফেলে. পরে ভুল বুঝতে পেরে ধরা পড়ার ভয় এই সব গাঁজাখোর প্ল্যান খাটিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেয়. আর দেখ লিখেছে পুলিশ অব্দি নাকি ভাবছে ব্যাপারটা অলোকিক. যত্তসব.

প্রীতম : ব্যাপারটা তুই যা ভাবছিস সেরকম নাও তো হতে পারে? মানে যেখানে পুলিশ পর্যন্ত কোনো কিনারা করতে পারছেনা সেখানে আমারও মনে হচ্ছে কোনো গলদ আছে.

অনিমেষ : আরে ভাই… তুইও শেষে এসব মানলি? আরে লোকটাই কালপ্রিট. এখন এসব করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে.

প্রীতম : আর ঐযে লিখেছে ঘরে তদন্ত করে তন্ত্র মন্ত্রের নানারকম জিনিস পাওয়া গেছে সেটা কি?

অনিমেষ : আরে ওটা ওই লোকটাই জোগাড় করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলো যাতে পুলিশ তদন্ত করতে এসে খুঁজে পায় ওগুলো আর ওর কথা বিশ্বাস করে. এখন তো মনে হচ্ছে রাগের মাথায় নয়, বরং পরিকল্পনা করে খুন করেছে লোকটা. নিশ্চই অন্য কারোর সাথে জড়িয়ে পড়েছিল আর তাই এটা করলো যাতে এদের থেকে মুক্তি পায়. জঘন্য লোক ছি..

প্রীতম : বা… তুই তো দেখছি সব আগের থেকে জেনে বসে আছিস. তুই শুধু সেটাই দেখছিস যেটা হতে পারে, যেটা বাস্তবিক কিন্তু এমনও তো হতে পারে লোকটার প্রত্যেকটা কথা সত্যি?

অনিমেষ : হাসালি ভাই… একটা লোক ব্ল্যাক ম্যাজিকের বসে এসে নিজের বৌ বাচ্চাকে মেরে দিলো, তারপর দুঃখে যন্ত্রনায় নিজেই গিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে এসব বললো. ব্যাপারটা খুব ইলোজিক্যাল হয়ে যাচ্ছে না?

প্রীতম হেসে : হয়ে যাচ্ছে না… ব্যাপারটা অবাস্তবই. কিন্তু…. অবাস্তব কিছু যে বাস্তবেও সম্ভব সেটা আমি মানি. আমার মনে হচ্ছে লোকটা সত্যি বলছে.

অনিমেষ : তোর কথা শুনে বেশ বুঝতে পারছি যে তুইও এসব গুলো তাপ্পিতে বিশ্বাস করিস. তা হঠাৎ এসবে বিশ্বাস জন্মালো কেন রে? ভুতে বিশ্বাস টা না হয় ছোট থেকেই তৈরী হয় মানলাম, কিন্ত আজকের সময়ে যখন দেশ প্রগতির দিকে এগিয়ে চলেছে তখনও যদি তোর মতো শিক্ষিত একটা ছেলে এসব কুসংস্কার মেনে চলে সেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর.

প্রীতম হেসে : ভাই তুই বুঝবিনা. যে ভুক্তভুগি হয় … শুধু সেই বোঝে… অন্য মানুষ শুধু শুনে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারে কিন্তু যে দিনের পর দিন চোখের সামনে অবিশ্বাস যোগ্য ব্যাপারকে সত্যি হতে দেখে সেই বোঝে বুঝলি?

অনিমেষ : বাবারে.. তুই তো রেগে গেলি রে…. আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম. আচ্ছা কি হয়েছে বল তো তোর? তখন ওই বাড়িটার সামনেও কেমন থমকে ছিলি, এখন আবার এসব অবাস্তব কথা শুনে আমার ওপর ক্ষেপে গেলি. কি ব্যাপার কি?

প্রীতম : বা… বা… ব্যাপার? না না… ব্যাপার না. আমি তোর ওপর রাগ করিনি.. তোর ওই কথাগুলো আমি মানতে পারছি না. দেখ এই বিশাল বিশ্বের কতটুকু আমরা জানতে পারি বল?

অনিমেষ : তা ঠিক… কিন্তু তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই এসব ব্যাপারে কিছু জানিস… কিরে? নিজের চোখে কখনো দেখেছিস নাকি?

প্রীতম : আমি? না না আমি ওসব দেখিনি কিন্তু আমার বন্ধুদের মুখে, বড়োদের মুখে ডাইনি, ভুত, আত্মা এসব শুনে শুনেই তো বড়ো হয়েছি তাই বললাম.

অনিমেষ হেসে : ওহ…. তাই বল….. আরে ধুর পাগল… এসব কি সব সত্যি নাকি? অলৌকিক গল্প অনেকেরই মুখে আমিও শুনেছি. কিন্তু যেই জিজ্ঞেস করেছি আপনি নিজে দেখেছেন? অমনি উত্তর পেয়েছি -না আমি দেখিনি আমার এক আত্মীয় দেখেছে. যত্তসব.

প্রীতম : বেশ বুঝতে পারছি তোর মধ্যে আধুনিকতার হাওয়া লেগেছে পুরো মাত্রায়. এসব ব্যাপার তোর কাছে বুজরুকি লাগবেই. বেশ…… তোকে একটা সত্যি ঘটনা বলি তাহলে. আমার এক বন্ধুর.

অনিমেষ : আবার সেই অন্যকারোর দেখা ভুত… যত্তসব.

প্রীতম : আরে আগে শোন না বাপু….. আমার খুব কাছের বন্ধু সে. আমায় মিথ্যে বলবেনা.

অনিমেষ : তা তোকে যে সত্যিটাই বলেছে তার প্রমান কি?

প্রীতম গম্ভীর মুখে বললো : নিজের মাকে নিয়ে কেউ মিথ্যে গল্প বলবে?

অনিমেষ : মাকে নিয়ে? মানে ওর মায়ের সাথে ঘটা?

প্রীতম চায়ে চুমুক দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো : হুমম…. ওর মাকে নিয়ে. না…. এটা কোনো ভুতের ঘটনা নয়…. তবে… অলৌকিক বটে. তবে ভালো নয় মন্দের দিকে.

অনিমেষ : মন্দের দিকে? কেমন শুনি?

প্রীতম : তুই শয়তানের উপাসনা কথাটা শুনেছিস?

অনিমেষ : হ্যা.. তা শুনেছি. ঐতো বাজে কিছু তান্ত্রিক আছে যারা কিসব শক্তিলাভ করতে শয়তানের নামে নিরীহ মানুষ বা প্রাণী বলি দেয়. তাইতো?

প্রীতম : ঠিকই বলেছিস. তবে পুরোটা জানিস না. এরা নিজেদের স্বার্থে যে.. কি না করতে পারে তার কোনো উত্তর নেই.

অনিমেষ : তা তোর সেই বন্ধুর মায়ের কি হয়েছিল?

প্রীতম আবার চায়ে চুমুক দিয়ে বললো : আজকে তোকে যেটা বলবো তার সাথে ওই পোড়ো বাড়িটার একটা যোগাযোগ আছে. তবে সেটা পরে. আসল সর্বনাশ শুরু হয়েছিল আমার বন্ধুর বাড়ির ভেতরেই.

অনিমেষ : কেমন শুনি?

প্রীতম আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো : তখন আমি ক্লাস ফোরে উঠেছি . আমাদের পাড়ার কলেজেই পড়তাম. বেশ কয়েকজন বন্ধুর দল ছিল আমাদের. রাজু, পল্টু, কামু, অতনু আর…….

অনিমেষ : আর? আর কে?

প্রীতম : বাবলু.

অনিমেষ : এই বাবলুরই কি……?

প্রীতম : হ্যা… ওরই কাহিনী এটা. বলি শোন্. আমরা তখন থেকেই খুব দুরন্ত. সকালে উঠে কলেজ আর ফিরে মাঠ. ব্যাস তারপরে খেলা আর খেলা. এই ছিল আমাদের ছোটবেলা. এমনি চলছিল সব তা হঠাৎ একদিন বাবলু খবর আনলো আজ রাতে নাকি নিশি বেরোবে.

অনিমেষ : নিশি? নামটা শুনেছি….. কিন্তু কি বলতো এটা? ভুত?

প্রীতম হেসে বললো : নারে…. অনেকেই নিশিকে ভুত বলে. কিন্তু নিশি কোনো ভুত নয়. বলছি শোন্. সেদিন বাবলু বিকেলে এসে আমাদের বললো আজ রাতে নাকি নিশি বেরোবে. আমরা জিজ্ঞেস করলাম যে তুই কিকরে জানলি? ও বললো ওর বাড়িতে যে কাজের বউটা কাজ করে সে খবর এনেছে. ওর মায়ের সাথে রান্নাঘরে এই ব্যাপারে বউটা এই ব্যাপারে কথা বলছিলো. ও তখন ওখানেই ছিল. আমি ওর জায়গা থেকে তোকে পুরো ঘটনাটা বলছি. তুই ভাব বাবলুই তোকে নিজের ঘটনাটা বলছে.

অনিমেষ : আচ্ছা…. বল.

প্রীতম : বাবলু শুনছিলো ওর মাকে চাঁপা বলছে….

চাঁপা : হ্যাগো দিদি… আমি ঠিকই শুনেছি আজ রাতেই সে বেরোবে. একদম পাক্কা খবর.

বাবলুর মা (কল্পনা): তাহলে কি হবে রে?

চাঁপা : কিকরবে বলো? জমিদার বাবুর একমাত্র ছেলে মৃত্যুমুখে. ডাক্তার বলে দিয়েছে যে কোনো আশা নেই. তাই শেষ চেষ্টা করতে জমিদার বাবু দূর থেকে এক ভয়ানক শক্তি সম্পন্ন তান্ত্রিককে ডেকে পাঠিয়েছে. সে নাকি অনেক অশুভ শক্তির অধিকারী.

কল্পনা : তো…… কি হবে তাহলে রাতে চাঁপা?

চাঁপা : আজ রাতে সেই তান্ত্রিক রাস্তায় বেরোবে দিদি. ওর হাতে থাকবে মন্ত্রপূত ডাব. সকলের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে সে সেই বাড়ির প্রধান পুরুষ সদস্যের নাম ধরে ডাকবে. যে সাড়া দেবে….সেই শেষ.

কল্পনা : আমি শুনেছিলাম তিন বার ডাকে.

চাঁপা : হ্যা দিদি…. তিন বার ডাকে. তবে এই তিনবারের মধ্যে কেউ যদি সাড়া দেয় তাহলেই তান্ত্রিক তার প্রাণ দেহ থেকে বার করে ওই ডাবের ভেতর আবদ্ধ করবে আর সেই প্রাণ নিয়ে যাবে ওই মরণাপন্ন ব্যাক্তির কাছে. তারপরে মন্ত্র বলে সেই আত্মা সেই ব্যাক্তির শরীরে প্রবেশ করিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তুলবে. এই পক্রিয়া বড়ো ভয়ঙ্কর আর অর্থবহুল. সবাই এত ব্যয় করতে পারেনা বড়োলোক ছাড়া আর এই পক্রিয়া যেকোনো ছোট খাটো তান্ত্রিকের কম্মো নয় বিশাল শক্তির অধিকারী হয় এরা.

কল্পনা : বাবারে…. ভয় লাগছে চাঁপা.

চাঁপা : তাইতো বলছি দিদি…… রাতে সজাগ থেকো. দাদার খেয়াল রেখো. এইসব কাজ অমাবস্যা রাতেই হয়. আজতো অমাবস্যা.

অনিমেষ হঠাৎ বললো : বাবা !! নিশির ডাক শুনেছিলাম ছোটবেলায় কিন্তু তা যে এরকম ব্যাপার জানতাম না.

প্রীতম : তাহলে? বুঝলি তো যা সহজ মনে হয় তা সবসময় সহজ হয়না. যাকগে….. বাকিটা শোন্. বাবলু আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম. তাই ও আমার থেকে কিছুই লুকোয়নি. সব বলেছিলো আমায়. ওর সাথে, ওর পরিবারের সাথে ঘটা সব ঘটনা. নিজের চোখে ও সব দেখেছিলো.

বিকেলে বাবলুর বাবা কাজ থেকে ফিরলে বাবলুর মা ওর বাবাকে সব বললো. বাবলুর বাবা অনেকটা তোর মতন. এসব একদমই বিস্বাস করেন না. তিনি বললেন…

বাবলুর বাবা : ধুর ছাড়তো…. যত্তসব ফালতু বুজরুকি… এসব মেনে মেনেই গ্রামের মানুষ গুলো ভয় কাঠ. সারাদিন কাজ করে ফিরেছি আমি. এসব কুসংস্কার মার্কা কথা কানের সামনে বলে মাথা গরম করে দিওনাতো. যত্তসব….. নিশি ডাকবে…. ভুত বেরোবে…. অবাস্তব কথাবার্তা যত রাজ্যের.

বাবলু মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো. বালুর মা বাবলুকে বললো : দেখলি তোর বাবার কান্ড? মানুষটার একটুও যদি আমার কথা শোনে.

বাবলু : মা…. তাহলে কি হবে? মাসী যে বললো আজ নিশি ডাকবেই. আর বাবার নাম ধরে যদি ডাকে আর বাবা জবাব দেয় তখন?

মা : শোন বাবলু…. যা করার আমাদের কেই করতে হবে. তুই আজ তোর বাবার পাশে ঘুমাবি. আর জেগে থাকবি. আমাদের আজ জেগে থাকতেই হবে. যেই দেখবি বাবা ওই আওয়াজ শুনে কিছু বলতে যাচ্ছে অমনি ওনার মুখ চেপে ধরবি. বুঝলি সোনা?

বাবলু : আচ্ছা মা… তুমি কোনো চিন্তা কোরোনা. আমি জেগে থাকবো.

রাতের খাবার পর ওরা বিছানায় শুয়ে পড়ে. দুই ধারে ওর বাবা মা আর মাঝে বাবলু. ওর মা ওর কানে কানে বলে দিলো : সাবধান বাবলু…. জেগে থাকিস….. কেন জানিনা পরিবেশটা ভার ভার হয়েছে আসছে. কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে. মনে হয় এসব ওই শয়তান তান্ত্রিকেরই কোনো কায়দা. চোখে ঘুম নেমে আসছে. ওই দেখ টির বাবা এখনই নাক ডাকছে. কিন্তু আমাদের জেগে থাকতে হবে.

বাবলু বললো : আমি জেগে আছি মা. তুমি ভেবোনা.

বেশ কিছুক্ষন সময় পার হয়ে গেলো. রোজ এইসময় কুকুরের ডাক সোনা যায় কিন্তু আজ সেটাও সোনা যাচ্ছেনা. সব নিস্তব্ধ. বাবলু একটু পরে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো কখন যেন ওর মাও ঘুমিয়ে পড়েছে. ওরও ঘুম পাচ্ছিলো কিন্তু জেগে রইলো ও. আরও কিছু সময় পার হলো কিন্তু কই? কোথাও তো কিছু সোনা যাচ্ছে না. তাহলে কি নিশি আজ ডাকবেনা? ভুল খবর? এইসবই বাবলু ভাবছিলো ঠিক তখনি ও শুনতে পেলো দূর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসছে – সুনন্দ? সুনন্দ? সুনন্দ?

তিনবার. এবারে আবার তরুণ? তরুণ? তরুণ? তারপরে রাজেন? রাজেন? রাজেন?

আওয়াজটা ক্রমশ এগিয়ে আসছে সামনের দিকে. এই তো খুব কাছে সোনা যাচ্ছে. ঐতো পাশের বাড়ির দিলীপ কাকুর নাম ধরে কেউ ডাকছে. এরপরেই বাবলুর বাড়ি. বাবার মুখের কাছে হাত নিয়ে প্রস্তুত বাবলু. বাবা কিছু বলতে গেলেই গায়ের জোরে বাবার মুখ চেপে ধরবে ও. এইতো বাবার নাম ধরে কেউ ডাকছে.

রতন? রতন? রতন?

বাবার মুখের ওপর হাত রাখা বাবলুর. না………… বাবার ঘুম ভাঙেনি. যাক বাবা… শান্তি. ঐতো গলার স্বর ওদের বাড়ি ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে হচ্ছে. বাবার আর বিপদ নেই দেখে বাবলু নিজের কৌতহল চেপে রাখতে পারলোনা. কে নিশি? দেখার জন্য ওর মনটা ছটফট করছে. বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে রাস্তার দিকে জানলাটা খুলে ও বাইরে চোখ রাখলো. অন্ধকার চারদিকে. কিন্তু ওই অন্ধকারেও ওর মনে হলো বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ লম্বা মতো চলে যাচ্ছে. আর চোখ খোলা রাখতে পারছিলোনা বাবলু. ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে ওর. এত ঘুম কোনোদিন পায়নি আগে. ফিরে এসে বাবা মায়ের মাঝে শুয়ে পড়লো ও. আর সেই যে ঘুমোলো চোখ খুললো মায়ের ঝাকানিতে.

কল্পনা : এই !!! এই !!! ওঠ বাবলু !!

ধড়মড়িয়ে উঠে বাবলু বললো : কি? কি মা?

কল্পনা : তোর বাবা উঠছেনা কেন? তখন থেকে ডাকছি উঠছেনা কেন?

বাবলু : তারমানে?

অনিমেষও বলে উঠলো : তার মানে? কি হলো?

তখনি নিচ থেকে প্রীতমের মা ডাকলো : তোরা নেমে আয়…… খেতে দিচ্ছি.

প্রীতম চেয়ার থেকে উঠে বললো : চল… খেয়েনি.

অনিমেষ : কিন্তু আগে কি হলো বল?

প্রীতম হেসে : আরে সারা দুপুর আছে, রাত আছে. সব বলবো. এখন চল… খেয়েনি.

চলব

এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url